মাননীয় সম্পাদক,

       আপনাদের প্রকাশিত এই বাংলা ম্যাগাজিনের আমি খুব ভক্ত। বিশেষত, স্বীকারোক্তি অংশটি আমাকে ভালো নাড়া দিয়েছে। দুই একটা পড়ে মনে হল আমার নিজের স্বীকারোক্তি আপনার ম্যাগাজিনের মাধ্যমে এনে সকলের সাথে নিজেও আনন্দ ভাগ করে নিই।

আমি একজন ছোটখাটো কোম্পানির কর্মচারী। রোজই শিয়ালদহ লাইনের ট্রেনে যাতায়াত করি। সেদিন দেরী করে অফিসে রওনা হয়েছিলাম। দুপুর ১২ টা হবে। অফিস টাইম বাদে সাধারণত লোকাল ট্রেনে ভিড় কম থাকে। কিন্তু সেদিন ট্রেনে উঠতে গিয়ে দেখলাম ভিড়ের চোটে ট্রেনের ভিতরে ঢোকা প্রাণান্তকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনক্রমে ভেতরে ঢুকে যেটা আন্দাজ করলাম, ভিড়টা স্বাভাবিক নয়- কৃত্রিম। একটু অনুসন্ধান করে দেখলাম সোজা লাইনের বিপরীতে এক ভদ্রমহিলা আড়াআড়ি ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকের উপরোধ বা অনুরোধে নিজের জায়গা থেকে এক বিন্দুও সরছেন না।  বরং উলটে সকলের সাথে তর্ক করতে ব্যস্ত। মনে মনে ভাবলাম, ওনাকে উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার। সে কারণে আমি ভিড় ঠেলে এদিক ওদিক যেতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোনভাবেই এগোতে পারছিলাম না, যেহেতু ভদ্রমহিলা আমার থেকে কিছু দূরে মাঝখানে দাঁড়িয়েছিলেন। উনি ৪০ এর কোঠায় হবেন, ভরা বুক- একটু মোটাসোটা, দেখতে খারাপ নয়। আমি কোন রকমে চেঁচিয়ে ওনাকে বললাম ঘুরে দাঁড়াতে। উনি আমার দিকে প্রশ্নচিহ্ন চাহনিতে আমার দিকে তাকালেন। ভাবখানা এই, কেন দাঁড়াব? আমি জানালাম, ‘সামনের স্টেশন বেলঘরিয়া আসছে, খুব ভিড় হবে, আপনি না ঘুরলে ঠেলে ঢোকানো হবে’।

বাইরে তখনও লোক ঝুলছে, ভেতরে ঢোকার জন্য ক্রমাগত অনুরোধ আসছিল। ভদ্রমহিলা আমার কথায় খানিক ভরসা করে বললেন,‘ঘুরব কি করে? ঘোরার জায়গা নেই’।

আমি তখন কায়দা করে , একটু এদিক ওদিক ঠেলে কোনরকমে ভদ্রমহিলার কাছাকাছি এসে পৌঁছেছি। আশেপাশের লোকজনকে বলে একটু সামান্য জায়গা বার করে ভদ্রমহিলাকে ঘোরাতে পারলাম। এবার আমি ভদ্রমহিলার ঠিক পিছনে। এত ভিড়, যে আমি প্রায় ওনার সাথে লেপ্টে গেছি। ওনার ফর্সা পিঠ আর আমার বুকের মধ্যে সামান্যতম ফাঁক নেই। ততক্ষণে বেলঘরিয়া এসে গেছে, হুড়মুড় করে লোক নামা শুরু করে আবার লোক ওঠা শুরু। যা নামল, তার থেকে উঠল অনেক বেশী। পিছন থেকে প্রচণ্ড চাপ এল, সেই ঠেলায় আমি আর উনি দুলে উঠলাম। মাথার মধ্যে দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল, পায়ের ফাঁকে ছোটভাই সজাগ হল। আলতো করে ছোট ভাইকে ভদ্রমহিলার পিছনের খাঁজে ঠিকভাবে রাখলাম। এবার ভিড়ের দ্বিতীয় ধাক্কায় এগোলাম না বটে, কিন্তু আমার উদ্দেশ্য সফল হল। ভদ্রমহিলা যেন একটু নড়ে উঠলেন। মুখে কিছু বললেন না। মনে হল, উনি যেন ব্যাপারটা উপভোগ করছেন।

পরের ধাক্কায় আমি একটু বেসামাল হলাম, আর দেখলাম আমার থেকে ভদ্রমহিলা আরো বেসামাল। উনি যাতে পড়ে না যান, বাধ্য হয়ে ওনাকে জড়াতে সামনে হাত বাড়ালাম। হাত দিয়ে আটকাতে অনিচ্ছাকৃত ওনার বুকে চাপ পড়ল। স্পঞ্জের মত হাত ঢুকে গেল। ভদ্রমহিলা সামান্য আহ্‌ করে আর্তনাদ করলেন। সেই আর্তনাদ আমাকে কেমন যেন আরো উগ্র করে তুলল। কোনক্রমে কানের কাছে কান এনে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কোথায় নামবেন’। উত্তর পেলাম, ‘শিয়ালদা’।
দমদমের লাইন দাঁড়িয়ে গেছে।  আমি ওনাকে নিয়ে কোনক্রমে  পিছন দিকের ডানধারের সাইডে এনে ফেলেছি। উনি সাপোর্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, আর আমি ওনার সামনে। ট্রেনের গতির তালে তালে চাপ আসছে ক্রমাগত। সেই চাপে আমিও দুলছি, দুলছে আমার ছোটভাই। আমার আর আমার ছোটভাইয়ের চাপ দেখলাম হাসিমুখে উনি সহ্য করছেন। মুখে একটা প্রশান্তি মাখা হসির রেখা ফুটে উঠছে।

দমদম এ এসে ট্রেন থেকে ভিড় খানিক কমল। দুজনে একটু হাঁফ ছাড়লাম। একটু ছেড়ে ছেড়ে দাঁড়ালাম। আমার মনে হল, ভিড়ের চাপে ওনার যৌন অঙ্গে অনিচ্ছাকৃত হাতের ছোঁয়া উনি ভাল উপভোগ করেন। ট্রেন শিয়ালদা ঢোকার পর, ভদ্রমহিলা আস্তে করে বললেন,’আসি’। কে বলবে তিনি কিছুক্ষণ আগে বীরবিক্রমে সকলের সাথে গলা উঁচিয়ে লড়ছিলেন?

 

                                                                                   ইতি

                                                                                      শান্তনু