ছবি ঋণ- মৌমিতা ভট্টাচার্য

   (হস্তিনাপুর থেকে দূরে এক তাঁবুশিবির। অন্তঃপুরের একপাশে বড় আয়না, অন্যপাশে বড় বিছানা। দ্রৌপদী ঘরের মধ্যে আয়নায় কেশচর্চা করছেন। কিছুটা চিন্তামগ্ন। চিন্তা তাঁর স্বামী প্রাণপ্রিয় অর্জুন কে নিয়ে। পরণে উর্ধাঙ্গে বক্ষবন্ধনী। ওড়নাও নেই। নিম্নাঙ্গে বস্ত্রখণ্ড।সূর্যের আলো্য ঘরময় আলোকিত।
কৃষ্ণের তাঁবুর বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে প্রবেশ। কৃষ্ণের পরণে রাজকীয় পোশাক)

   কৃষ্ণ- হাই ডার্লিং! কি খবর? কেমন আছো?

 দ্রৌপদী(আয়নাতে কৃষ্ণকে লক্ষ্য করে) ডার্লিং এর ১০৮! ন্যাকামো মেরো না।

   কৃষ্ণ – (তাঁবুর ভেতরে ঢুকে) সক্কাল সক্কাল চটে কেন?

দ্রৌপদী- (বাহুতে একটা মশা বসেছিল। চপেটাঘাত করে) চটবো না?? লোকের একটা হয় না, আমার পাঁচটা জোয়ান-মদ্দ  স্বামী!! তার ওপর তাদের এক (বুড়ি) মা জুটেছে। আর এমন রাজার ফ্যামিলিতে বিয়ে হলো যাদের শালা রাজত্ব- নেই!  রাজত্ব-তো অনেক বেশি বলে ফেললাম, থাকার মতো একটা ঠিকঠাক ঘর নেই -কখনো এর বাড়ি, কখনো তার বাড়ি, কখনো বনবাস ! শালা কি কুক্ষণে যে অর্জুনকে পছন্দ হয়েছিল! এই জন্যই বলে প্যাকিং দেখে মাল বিচার কোরো না।

   কৃষ্ণ - এ কি ভাষা প্রিয়ে !!

দ্রৌপদী- রাখো তো তোমার নাটক ! এর চেয়ে কর্ণকে বিয়ে করলে ভালো হতো।

    কৃষ্ণ - রাজকন্যের মালা সূতপুত্রের গলায়!

দ্রৌপদী-  কেন,  শোনোনি?  " জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক খাঁটি!"

    কৃষ্ণ - তবুও! বংশের একটা নাম-ইজ্জত !

 দ্রৌপদী-   আবার ন্যাকামো! সূতপুত্র!  (ভেঙচে) ঢ অ অং। কর্ণ তোমার পিসির বড়ছেলে... কিছুই জানিনা ভেবেছো?

    কৃষ্ণ – (খাবি খেয়ে) মানে...ওই কুমারী...মানে... বোঝোই তো!

     দ্রৌপদী - কি?? সিঙ্গেল মাদার হলে দোষ?? মাই লাইফ... মাই চয়েস! তোমাদের এই মেল শভিনিজম-গুলো বন্ধ করো তো! এইযে তুমি ১০৮টা গোপিনী রাখো... তার বেলা? আর তোমার প্রিয় বন্ধু...

     কৃষ্ণ –(মুখের কথা কেড়ে নিয়ে) হ্যাঁ,কোথায় তোমার অর্জুন, প্রিয়ে?

 দ্রৌপদী - আমার একার? কতজনের বলো ! উলুপী-কলাপী... এমন কি তোমার বোন... কতজনের প্রিয়ে তিনি! (চোখে শাণিত বাণ হেনে) সত্যি, দুই বন্ধু-ই... সাধে বলে "চোরে চোরে মাসতুতো ভাই!"

     কৃষ্ণ আহা! বড় মন... সেটা দেখো।

 দ্রৌপদী( চিমটি কাটার মত) সেই ! তুমি তো আরো মহান! পেমিকা রাখো... শালা দুটোই মেয়েবাজ !

   কৃষ্ণ –(প্রসঙ্গ পাল্টে) কিন্তু সে কোথায় ! যুদ্ধ সামনে, বাকি সবাইকে দেখলাম প্র‍্যাক্টিসে, সে কই?

    (টলতে টলতে অর্জুনের প্রবেশ, হাতে গাঁজার কল্কে. বেশভূষা ধূলায় লুণ্ঠিত, ব্যাকগ্রাউন্ডে "উপর উপার রেহনে দে" গান)

  অর্জুন – (জড়িয়ে জড়িয়ে) অহম্ ব্রহ্মাস্মি!

    কৃষ্ণ – (প্রচণ্ড বিস্ময়) এই!! কি অবস্থা তোমার পার্থ??

  অর্জুন – বুকে আয় ভাই! বাবার প্রসাদ...চলবে?

     কৃষ্ণ –সামনে যুদ্ধ! আর অর্জুনের হাতে ছিলিম?

  অর্জুন – যুদ্ধ? কিসের যুদ্ধ? কেন যুদ্ধ? (গলা চড়িয়ে বেসুরো গলায়) "ওরে কৌরব সেনা...তোরা যুদ্ধ করে করবি কি তা বল !"

     কৃষ্ণ – (দ্রৌপদীর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে) এ কি হাল!  এসব কবে থেকে?

  দ্রৌপদী – (সখেদে) সেই বনবাসের সময় মহাদেবের থেকে পাশুপত আনতে গেল...তারপর থেকেই এসব শুরু করেছে!

     অর্জুন – (মনে স্ফুর্তি নিয়ে) বাবা প্রসন্ন হয়ে পাশুপত-ও দিলো... প্রসাদ-ও দিলো! আহা! কি প্রসাদ মাইরি... মনে হয় উড়ে যাচ্ছি... মানহে উপার উপার রেহনে দে!!

        কৃষ্ণ – (ভৎর্সনা সুরে) অর্জুন! হস্তিনাপুরের সিংহাসনের জন্য তোমায় গাণ্ডীব ধরতে হবে ! লোকে তোমার মুখ চেয়ে আছে ! তোমার নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছে...আর তুমি?

    অর্জুন – তোমরা আমার জয়ধ্বনি দিচ্ছো? কিন্তু বিশ্বাস করো, রাজা সাজতে আমি আর চাইনা ! কি হবে সিংহাসনে বসে , ডালগোনা কফি খাবো? ধুস! বিশু-কে বললে এরচেয়ে ভালো মাল বানিয়ে দেবে!

   দ্রৌপদী – (ফুঁসে উঠে) আর আমার অপমানের বদলা?

   অর্জুন –An Eye for an eye make the whole world blind"!  ক্ষমা পরম ধর্ম!!

  দ্রৌপদী – এই তোমার প্রেম?

  অর্জুন – (বিরক্ত হয়ে) এইজন্যই শালা বিয়ে করতে নেই... ধুনকি কাটিয়ে দিচ্ছো... (বিছানায় গিয়ে বসে) এই শোনোনা... রসগোল্লা আছে? দেবে?

দ্রৌপদী – (রাগত স্বরে) হ্যাঁ শালা, আমি তো চাকরানী! বাকি বৌগুলোকে গিয়ে বল....

 অর্জুন – (উদাস হয়ে) যদি একাধিক নারী না-ই থাকে জীবনে...তালে কিসের পুরুষমানুষ?? কি বলো কৃষ্ণ? "স্ক্যান্ডেল চাই জীবনে... স্ক্যান্ডেল চাই... নইলে পুরুষ বলে পাবেনা সম্মান!"

   কৃষ্ণ – নো কমেন্টস!

দ্রৌপদী থাক! শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল!

 অর্জুন – (কৃষ্ণের দিকে তাকিয়ে) তা কৃষ্ণ, বাকি খবর সব ভালো তো? দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করবো একসাথে... তাপ্পর ঘুম...

   কৃষ্ণ – (স্বগতোক্তি)"আজ বাদে কাল যুদ্ধু হবে"... আর ইনি ঘুমোবেন!

 অর্জুন – আবার যুদ্ধ-যুদ্ধ করে... মেক লাভ ব্রো.. নট ওয়ার!

   দ্রৌপদী – (বিরক্ত হয়ে কৃষ্ণের প্রতি) এই!! যা হোক করে মালটাকে ঠিক করো! মেয়েবাজি নাহয় ঝেঁটিয়ে দূর করবো.. এতো নেশাখোর!

    অর্জুন – (নিরুত্তাপে)বাবার প্রসাদ-কে নেশা বলেনা প্রিয়ে! আহ! এক্টু ল্যাদ খাই (বিছানায় শয়ন)।

     কৃষ্ণ (অনেক ভেবে) আইডিয়া! মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্র!!

  দ্রৌপদী কি??

   কৃষ্ণ মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্র। এ এমন এক যন্ত্র- যা মাথায় রোপণ করে মন্ত্র!

  দ্রৌপদী মানে মগজ-ধোলাই?

   কৃষ্ণ ঠিক তাই!! আমি একটা বই লিখেছি... গীতা। সেটাই এর মাথায় ইনপুট করতে হবে!

দ্রৌপদী – এ আবার নতুন কোন গোপিনী কে নিয়ে?

অর্জুন – (মটকা ছেড়ে উঠে) এই !  নতুন গোপিনী? আলাপ করা ভাই।

    কৃষ্ণ (বিরক্ত হয়ে) দুর শালা! শ্রীমদভগবদগীতা!

দ্রৌপদী – সেটা আবার কি?

   কৃষ্ণ সবকিছুর সলিউশন। আচ্ছা, পার্থকে আমার ল্যাবে নিয়ে গেলাম। বিকেলের মধ্যে ফুল চেঞ্জ করে ফেরত  আনবো ডার্লিং।

 দ্রৌপদী – যাও নিয়ে! দেখো কি হয়।

   কৃষ্ণ – (অর্জুনকে টেনে তুলে) অর্জুন চলো , ভালো মণিপুরী প্রসাদ আছে।

অর্জুন – (অতি উৎসাহে) এই সত্যি! চলো... কৈলাশের মাল আছে?

   কৃষ্ণ সব আছে! চলো এখন... রথ রেডি! (দ্রৌপদীর দিকে ফ্লায়িং কিস দিয়ে)  বাই সুঈটহার্ট!

দ্রৌপদী – (ফ্লায়িং কিস উড়িয়ে) বাইইইই!!

 অর্জুন – " প্রেম বাবা...প্রেম বাবা.. জয়ো মহাদেবা!! বানাও..বানাও...বানাও...রাইট নাও! (ফেড হবে গানটা)

               (ব্যাক গ্রাউণ্ডে কুন্তীর গলা- বৌমা! এক্টু শুনে যাও না!)

দ্রৌপদী – ( মাথা চাপড়ে) যাই মা।  (স্বগতোক্তি) ওই ,বাড়ির চাকরানীর ডাক পড়লো!

(দর্শক শ্রোতাদের দিকে তাকিয়ে) আচ্ছা হ্যাঁ.. যাওয়ার আগে সবার জন্য বলে যাই... এখন সত্যি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি! তাই... ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন... আর ঘরে থেকেই যুদ্ধটা লড়ুন! আর অমান্য করলে শাস্তি কি জানেন তো! মগজ ধোলাই!

                                              (ও বৌমা! কই গেলে গো)
                ধুস! এ বুড়ি পাগল করে দেবে... যাই!!!!